আগামী ৯ মার্চ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে (মসিক) ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে রোববার (২২ জানুয়ারি) গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে ময়মনসিংহ নগরীর চা স্টল, অফিস-আদালত ও পাড়া-মহল্লাসহ সর্বত্রই ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছে।
এবার সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজের প্রার্থীতা জানান দিতে শুরু করেছেন প্রচার কাজ। সেই সঙ্গে রাজনীতির মাঠে বিএনপি এবারও নির্বাচনের বাইরে থাকায় ভোটের আগে মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে।
আর এ কারণেই নৌকার মনোনয়নপত্র নিজের ভাগে আনতে লবিং তদবিরে প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন দলীয় হাইকমান্ডের উচ্চ পর্যায়ে।
মেয়র প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছে চারজনের নাম।
তারা হলেন- বর্তমান সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ইকরামুল হক টিটু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাদেক খান মিল্কি টজু এবং নগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও প্রয়াত পৌর মেয়র মাহমুদ আল নূর তারেকের ছেলে অ্যাডভোকেট ফারমার্জ আল নূর রাজীব।
সূত্র মতে, ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর ময়মনসিংহ পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনের ঘোষণার গেজেট প্রকাশ হয়।
এরপর ২০১৯ সালের ৫মে এই সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়। তবে ওই নির্বাচনে বিএনপি থেকে বা বিরোধী কোনো প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন মো. ইকরামুল হক টিটু। ওই ভোটে শুধু মসিকের ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১১টি সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত পদগুলোতে নির্বাচন হয়েছিল। এতে মোট ভোটে কেন্দ্র ছিল ১২৭টি।
তবে ওই নির্বাচনের পরাজিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোট কারচুপিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল চরমে। ফলে ভুক্তভোগীরা পুনরায় ভোটের দাবিসহ স্মারকলিপি প্রদান ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের ওইসব কর্মসূচি হালে পানি পায়নি।
দলীয় সূত্র জানায়, এবার ভোটের আগে মূল যুদ্ধ হবে দলীয় মনোনয়নে। আর এ কারণেই প্রার্থীরা দলীয় হাইকমান্ডের উচ্চ পর্যায়ে শুরু করেছেন লবিং তদবির। তাছাড়া বিগত সিটি নির্বাচনে মসিকের বর্তমান মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেও এবারের কঠোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে। ফলে ভোট উৎসবমুখর হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কারণ সংসদ নির্বাচনের মতো এবার সিটিতেও দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থিতার সুযোগ হতে পারে।
আসন্ন সিটি নির্বাচন সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু জানান, নগরীর উন্নয়নে প্রত্যাশিত কাজ করা সম্ভব হয়নি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, করোনাসহ বৈশ্বিক কারণে। তারপরও সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি নগরের উন্নয়নে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি রয়েছে ময়মনসিংহবাসীর প্রতি। এ কারণেই অনেক প্রতিকূলতা মারিয়ে নগরীর উন্নয়নে কাজ করতে পেরেছি।
তাছাড়া আমি সব সময়ই জনগণের পাশে ছিলাম, জনগণও আমার পাশে আছে। আশা করি দল এবারও আমাকে মনোনয়ন দেবে এবং আগামীতে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি সমৃদ্ধ নগরী গড়তে পারব।
সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী সাদেক খান মিল্কি টজু বলেন, দীর্ঘসময় ধরে দলের সুসময়-দুঃসময়ে দলের কাজ করেছি। কখনো দলের কাছে তেমনভাবে কিছু চাইনি, এবার আশা করছি জননেত্রী আমাকে নিরাশ করবেন না। এ সময় তিনি ময়মনসিংহ নগরীকে অপরিচ্ছন্ন, নোংরা, ধুলাবালিযুক্ত ও অপরিকল্পিত শহর উল্লেখ করে বলেন, অপরিকল্পিতভাবে আকাশছোঁয়া শত শত ভবন হচ্ছে নগরীতে, ভবিষ্যতে আমাদের সন্তানরা আকাশ দেখতে পাবে না। সামান্য বৃষ্টি হলেই শহর তলিয়ে যায়। যানজটে নাকাল এই শহর এখন বিশ্বের ৯ নম্বর ধীরগতির শহর। আমি সুযোগ পেলে এই শহরকে পরিকল্পিত ধুলাবালিমুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও স্মার্ট নগরী হিসেবে গড়তে চাই।
আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম বলেন, আমি নগরীর উন্নয়নে কাজ করতে চাই। আশা করছি জননেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়ে নগরীর উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ দেবেন।
ব্যতিক্রমী আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট ফারমার্জ আল নূর রাজীব।
তিনি বলেন, আমার বাবা এই পৌরসভার দুইবার চেয়ারম্যান ও মেয়র ছিলেন। কিন্তু ২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল তিনি মেয়র পদে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এই শহরকে নিয়ে বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল। আমি বাবার স্বপ্ন পূরণে এই শহরের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। আশা করি শহরবাসী আমার বাবাকে মনে রেখেছে কারণ আমরা কখনো কোনো অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।
দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে রাজীব আরও বলেন, বিগত সময়েও আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম, তখন নেত্রী বলেছিলেন দেখবেন। আশা করি এবার আমি মনোনয়ন পাব। কারণ তিন প্রজন্ম ধরে পারিবারিকভাবেই আমরা আওয়ামী লীগ করি। আমরা পদে এসে দলে যোগ দেয়নি।
উল্লেখ্য , ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ৯১.৩১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই নগরী। এর মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৮ জন।