সব
বালু মহাল ইজারা হলেও মামলার বেড়াজালে আটকে রয়েছে বালু উত্তোলনের আদেশ। ফলে জেলা প্রশাসন থেকে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আদালত অমান্য করে চলছে তাওয়াকুচা বালু মহালের বালু হরিলুট। শুধু নদীর বালু নয়, সাথে লুট হচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ খনিজ সম্পদ সাদা বালুও। শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার ভারতঘেঁষা খাড়ামোড়া-বালিজুড়ি গ্রামের সোমেশ^রী নদী থেকে প্রকাশ্যে এমন হরিলুট চলছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চলতি বাংলা সনে শ্রীবরদী উপজেলার খাড়ামাড়া ও ঝিনাইগাতি উপজেলার বালিজুড়ি এ দুই গ্রামের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে ভারত থেকে বয়ে এসেছে সোমেশ^রী নদী। পাহাড়ি এ নদীতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বালু মওজুদ হয়।
প্রতিবছর শেরপুর জেলা প্রশাসন নদীর খাড়ামোড়া-বালিজুড়ি অংশের ৬.৫০ একর (সাড়ে ছয় একর) জায়গা তাওয়াকুচা বালু মহাল হিসেবে ইজারা প্রদান করে। চলতি ১৪৩০ বাংলা সনে মহালটি প্রায় ৪৮ লাখ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ইজারা পায় শামীম বস্ত্রালয় নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু গেল বছর শামীম বস্ত্রালয় এর স্বতত্ত্বাধিকারী শামীম এর মামা আল-আমিন তার মালিকানাধীন আল-আমিন বেকারী প্রতিষ্ঠানের নামে একই বালু মহাল প্রায় ৫২ লাখ টাকায় ইজারা নেন। সেসময় তিনি বালু মহাল ইজারা নিয়ে লোকশান গুণেছেন দাবী করে বালু মহালের মেয়াদ বৃদ্দি চেয়ে হাইকোর্টে একটি মোকদ্দমা করেন। ওই মোকদ্দমার প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের নির্দেশে বর্তমানে বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ রেখেছে জেলা প্রশাসন। তবে এ নিষেধাজ্ঞা মানছেন না বর্তমান ইজারাদার। আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে প্রতিদিন বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছেন শামীম। শুুধু তাই নয়,নিয়মানুযায়ী প্রাপ্ত ইজারার মূল্য পরিশোধ করার কথা থাকলেও তা না করেই বালু উত্তোলন করায় সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।সূত্র বলছে, নিয়মানুযায়ী ইজারার মূল্য পরিশোধ না করলে দ্বিতীয় দরপত্রদাতা ওই বালু মহালটি প্রাপ্ত হবেন। কিন্তু এখানে কোনটাই মানা হচ্ছে না।অন্যদিকে নদীর বালু মহালের পাশাপাশি নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে ভূ-গর্ভস্থ খনিজ সম্পদ সাদা বালূু উত্তোলন করে তাও বিক্রি করছেন ইজারাদার কর্তৃপক্ষ।সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, খাড়ামোড়া গ্রাম থেকে নদীর বালু ও ভূ-গর্ভস্থ সাদা বালু উত্তোলন করে কয়েকটি ট্রাক্টরে (কাঁকরা গাড়ি) করে প্রতিনিয়ত নদী পারাপার করে আনা হচ্ছে বালিজুড়িতে।পরে বালিজুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তা ও বালিজুড়ি বাজারের দক্ষিণে পাকা রাস্তার পাশে মওজুদ করে সেখান থেকে প্রতিদিন বিক্রি করা হচ্ছে বালু। সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান শামীম বস্ত্রালয় এর মালিক শামীম এসব বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছেন বলে জানিয়েছেন বালু বহনকারী ট্রাক্টরের চালকগণ ও স্থানীয়রা।এ বিষয়ে শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার ইউনুছ জানিয়েছেন,তাওয়াকুচা বালু মহাল শ্রীবরদী উপজেলার অন্তর্ভূক্ত নয়।তবে খাড়ামোড়া গ্রাম এ উপজেলার অন্তর্ভূক্ত জানানো হলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মনিরুল হাসান জানিয়েছেন, হাইকোর্টে মামলা চলমান থাকায় বালু মাহাল থেকে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করার আদেশ দেওয়া হয়নি।এ নির্দেশ অমান্য করা বে-আইনী বলে জানিয়ে তিনি বলেন,এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান তাদের সাথে চুক্তিমূল্য (বিডি) জমা দেয়নি। ফলে কোনভাবেই বালু উত্তোলন করা যাবে না।
মন্তব্য