সব
ওয়ারিশান এবং সাব-রেজিস্টারের স্বাক্ষর জাল করে পিতার মৃত্যুর আগেই জাল বন্টননামা দলিল সম্পাদন করে। জাল দলিল ব্যবহার করে ওয়ারিশানদের জমি নিজ নামে জমা খারিজ করিয়ে নেয়ার অভিযোগে ময়মনসিংহ তারাকান্দা ভূমি অফিসের কর্মচারী মোঃশামছুল হকের বিরুদ্ধে। দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামী শামছুল হকের প্রতি গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে ময়মনসিংহের বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নং সি.আর আমলী আদালত।
মামলার আরজি এবং ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানার কুমারগাতা (নামাপাড়া) গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা মোঃ রফিকুল ইসলাম, পিতামৃত-ইব্রাহিম মন্ডল @ ইব্রাহিম মিয়া বাদী হয়ে ময়মনসিংহ বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং সি আর আমলী আদালতে তার সহোদর ভাই শামসুল হককে প্রধান আসামী করে ১৪৩০/২৩ নং সি.আর মামলা দায়ের করেছেন। মামলার অপর আসামী হলো শামছুল হকের ছেলে আব্দুল কাদির জিলানী সুমন ।
মামলার বিবরনে আরো জানা যায়, বাদী মো: রফিকুল ইসলামের আরও ৪ ভাই এবং ২ বোন রয়েছে। বাদীর পিতা ইব্রাহিম মন্ডল ওরফে ইব্রাহিম মিয়া গত ৩১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সনে মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে বাদী রফিকুল ইসলাম সহ তার ভাই বোনেরা ঘরোয়া বন্টন মূলে পৈতৃকসম্পত্তি প্রাপ্ত হয়ে ভোগ দখল করতেছিলেন। সম্প্রতি বাদী রফিকুল ইসলাম শুনতে পান ১ নং আসামী শামসুল হক ও ২নং আসামী আব্দুল কাদির জিলানী @ সুমন মানুষজনকে বলে বেড়াচ্ছে ৪৫৫ নং খতিয়ানের ৫টি দাগে যথাক্রমে ৪০০৫, ৪০১৬, ৪০১৮, ৪০৪৩ এবং ৪০১৪ খতিয়ানের মালীকানা ১নং আসামী শামসুল হকের। এই বিষয়ে শালিসী বৈঠকে ১নং আসামী একটি দলিল দেখিয়ে বলে, দলিলে উল্লেখিত দাগের সম্পত্তি রেজিস্ট্রি বন্টন নামা দলিল মূলে সে প্রাপ্ত হয়েছে, সেই সাথে তার নিজ নামে জমা খারিজও রয়েছে। দলিলটি দেখার পর বাদী রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষী এবং ওয়ারিশগণ বিষ্মিত হয়ে যান। কারণ স্পষ্টই বোঝা যায় দলিলটি জাল। তবুও থেমে থাকেননি বাদী রফিকুল ইসলাম। তিনি তহশিল অফিসে যান এবং খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন ১নং আসামী শামসুল হকের নামে জমা খারিজ রয়েছে,যার খারিজ খতিয়ান নং-২৩৩০ এবং জমা খারিজে মালিকানা হিসাবে দলিল নং-৭১৩৬ ইং ০৫/১০/২০১৫ এর একটি বন্টননামা দলিল দাখিল রয়েছে। অবিকল সেই জাল দলিল যা পিতার মৃত্যুর আগেই রচিত হয়েছে। বাদী রফিকুল ইসলামসহ স্বাক্ষী ওয়ারিশগণ বিষ্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেন অবিকল সেই জাল দলিলটি ১নং আসামী শামসুল হক সালিশী বৈঠকে দেখিয়ে ছিলেন। উক্ত জাল বন্টননামা দলিলে দেখা যায় বাদী রফিকুল ইসলামের পিতা ইব্রাহিম মন্ডল ওরফে ইব্রাহিম মিয়ার মৃত্যুর আগেই অত্যন্ত সঙ্গোপনে এই জাল দলিলটি সৃজন করা হয়েছে যা শুধু অবাস্তব হাস্যকরই নয় বরং চরম প্রতারণা ও জালিয়াতির সামিল। উক্ত জাল দলিলে আরও দেখা যায়, ১নং আসামী শামসুল হক তার সকল ভাই বোনদের বন্টননামা দলিলে পক্ষভূক্ত করে জাল দলিলটি তৈরী করেছে অথচ উক্ত সময়ে আসামী শামসুল হকের পিতা ইব্রাহিম মন্ডল ওরফে ইব্রাহিম মিয়া জীবিত ছিলেন।
এরপরও সন্দেহমুক্ত হবার জন্যে বাদী রফিকুল ইসলাম মুক্তাগাছা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যান এবং দলিল নম্বর নিয়ে তল্লাশী চালান। তল্লাশীতে দেখা যায়, দাতা মো: আমছর আলী এবং গ্রহীতা মোবারক আলী গংদের নামে একটি হেবা দলিল যার তফশিলের সাথে উল্লেখিত জাল দলিলের পক্ষগণের নাম স্বাক্ষর সব কিছুই ভিন্ন।
১নং আসামী ও ২নং আসামী পরস্পর পিতা-পুত্র। ২ জন যোগসাজশে সাব-রেজিস্টার সহ বাদী ও অন্যান্য ওয়ারিশদের স্বাক্ষর, টিপ সই জাল করে পিতার মৃত্যুর আগেই জাল বন্টননামা দলিল তৈরী করে জমাখারিজ করার জন্য ভূমি অফিসসহ অনলাইনে আবেদন করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যেই চাঞ্চল্যকর এই ভূমি জালিয়াতির দুর্ধর্ষতার কারণে ময়মনসিংহের বিজ্ঞ আদালত ১নং আসামী শামসুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং ২নং আসামী আব্দুল কাদির জিলানী সুমনের বিরুদ্ধে সমন জারী করেছে। এদিকে বাদী মো: রফিকুল ইসলাম বিজ্ঞ আদালতের কাছে ন্যায় বিচারের প্রত্যাশা করে আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক আইনানুগ বিচার দাবী করেছেন।
মন্তব্য